কুর্বঃ দেবার্ঘ্য গোস্বামী
কুর্ব
দেবার্ঘ্য গোস্বামী
কুপির জড়োসর আলোর মতন কাঁপা কাঁপা একটা পচা গন্ধ ঘরের আনাচ কানাচে গড়াইতে থাকে। ধীরে ধীরে গাঢ় হয়। থিতায় পড়া দোলায় কাদার সরের মতন ধীরে নিপাটে জড়ায় ধরে নাক মুখ। নিশ্বাস বন্ধ হয়া আসে। এক বুক কোঁত হাওয়া - ঠাপায় চাপ মারে চোখের নীচে। বিষ গিঁটে আবজান চোখের পাতার ভিতর গলে না এক ছটাক আলোও। জমাট ঘুমের ভিতর ফোঁকর খুঁজতে গিয়ে দাঁত মারিতে মুখ থুবড়ায় পরে জিভ।
কষ্ট হয়৷ খুব কষ্ট হয়।
কি এক তরাসে চোখ তড়াক তাক করে পাশের মাচায়। মাথা থাকি পা পর্যন্ত ক্যাথায় মুইড়ে শুয়া আছে ও কে! থিকথিক গুমরানিতে চাদর জুড়ে ভনভনায় মাছি। চাদরের নীচে জমা হরহরান পচা গন্ধ গলে চুঁয়ায় ভরায় দিচ্ছে ঘর। হুস করে চাদর সরালে পরিষ্কার দেখা যায় মুখ।
বেঁইকে যাওয়া নাক, হা মুখ বায়ে ঝরে থাকা কষ। চাদরের নীচে শুয়া আছে ব্যাটা। চোখের তলায় ঠোঁটের উপর হালকা নীল ছাতা। খোলা চোখের ভিতর থেকে টুকরা টুকরা ভেজা, একে একে চুইষে নিতে লাইন দিছে পিঁপড়ার দল। কাঠ শুয়া আছে শুকনা মুখ কঙ্কাল হওয়ার অপেক্ষায়।
ঘাড়ের পিছে দ্বপ করি জ্বলি ওঠে এক জোড়া চোখ;
“বাঁচি রাখা নাইগবে না! মরি যান এইবার। এক বার মরি গেলে আর কষ্ট নাই।”
অনেকটা কান্না দলা পাকায় এক সাথে বার হতে গিয়া গোঙ্গানির মতন চাইপে ধরে গলা! সেই ফোঁপানিতে কাঁপ ধরে হাড়ে। হাড় থেকে সেই কাঁপ লাগে মাচায়- মাচা থেকে মেঝে – মেঝে থেকে উঠান। উঠান থেকে সেই কাঁপ কামরাঙ্গা গাছে ঝিমান প্যাঁচার শরীরে হুড়কা দিলে খুব বিশ্রী চিৎকারে গাছ বদলায় প্যাঁচা।
ঘুম ভাঙ্গে বাবলু বিশ্বাসের।
মুতে ফিরে শুয়ে থাকা ব্যাটার মাচা ঘেঁইষে খাড়ায় বাবলু। পায়ের তলায় চ্যাটকায় যাওয়া কদমের গোটার মতন ক্যাতরে আছে খাটে। মুখের দিকে তাকাইলে শিউরায় ওঠে শরীর। হা মুখ বায়ে কষ ঝরে আছে। কুচকান চোখের পাতা - বেঁকে যাওয়া নাকে অবিকল মায়ের মরা মুখ। দুরদুর বুকে মুখের কাছে আঙ্গুল দিয়া নিশ্বাস ছুঁয়ে দেখে বাবলু। বুকের খুব কাছে কান মিশায় দিয়ে আওয়াজ খোঁজে। কপালে ঠোট ঠেকায় দিয়ে কি পড়ে বিড়বিড়। হাতে বাঁধা তেইল কিষ্টা মাদুলির গাঁট টাইট করতে গেলে খ্যাচায় ওঠে ব্যাটাঃ
"কি কইরবার নাগচেন!"
"কত বার কচি। সত্য নারায়ণের মাদুলি তুমার মার আছিল। সামলায়া রাখবা ......আর শুন। ঈদের দিন তুমার খান সাহেবের বাড়িত গিয়া বাসন মাজার দরকার নাই। ওদের আইঠা ছোঁয়া বিধানে নাই। মুসলমানের সাথে অত গা ঘেঁষাঘেষির কি দরকার। দিনকাল ভাল না। গোধূলি বাজার থিকা কালা নুনিয়া আনচি। পোলাও বানায়ে দিব নে।কালা ভুনার লোভ কইর না।"
আলো থাকতে নাই। বিড়ির আগার টিমটিম লাল নিশানও এখানে মাথার হদিস দেয়। সিঙ্গিমারির জল। টলটল অন্ধকার আজ। সতের বছর আগের দুই পাড় জুড়ে দেওয়া সাঁতরামির রাতেও ছিল এমন অন্ধকার। খুব উল্টা টান দিসিল জল সেদিন। ফিরায় আনার সব ফিকির নিয়া বুকে বাঁধছিল স্রোত। তারে ভাঙ্গতে হইচিল। হাতের ঝাপটে- পায়ের লাথে। আজের মতন এমন অন্ধকারে গুলায় যায় এই পাড় ওই পাড়। পায়ের পাতায় জল কাটতে কাটতে কিচ কিচ বালি বোধ হয়। পায়ের পাতা ডোবা বালির চর জুড়ে গা ছড়ায় শুয়ে থাকা সেই রাত – শ্যাওলার মতন জড়ায় যায় গায়ে। সাঁতার আর হাঁটার ফারাক করেনা শরীর। এমন অন্ধকার রাতে, পায়ের শুধু পালান মনে থাকে। কোথায় – কি - কেন - কবে মন্ড মতন গুলতে থাকে জলে......
চরটা পার হইলেই নদী। নদীর ওই পাড়ে পৌঁছাইতে পাড়লেই বাঁচি থাকা!
চর ধরে হাঁটে দুই জনে। পায়ের ভিতর ঢুকে যাওয়া বালি ঠান্ডা মতন কাইটে দেয় আঙ্গুলের ফাঁক। সামনে নদী দেখা যায় না! পিছে গ্রাম নাই। চরের উপর তুলা তুলা সাদায় বাঁধা চোখে , কোন পারে বাঁক নেয় হাঁটা, ছাড়ি আসে কোন পার তা নিয়ে ভোর পর্যন্ত ভ্যাবচ্যাক থাকে দুই জোড় খালি পা। তবু নদী পাড়ের হিসাব-হাওয়ায় ভাইসে ভাইসে একটা দিক ঠিকি পায়ে যায় শরীর।
জল ছুঁতে চলার চুমুক দূরত্ব আগেই- পিছ থেকে আসা আলোর তলানিতে হলকা লাগে গায়ে। বাঁশ – খড় – লাউয়ের ডগা – খুঁটি তে বাঁধা ছাগল – কেরোসিন – কাগজ – বিছানা – চামড়া- কাপড় – মাংস – পোড়ার আলোতে পিছনের আকাশের পায়ের কাছে লাল জইমে ওঠে। পোড়ার গন্ধ পাওয়ার জন্য নিজ মনেই নাক উঁচু করে দেয় জ্যোৎস্না! মরা মানুষের ভরপুর গন্ধে টইটই ভরে ওঠে ফুসফুস। সারা রাত হাঁটায় ক্লান্ত রক্ত- হাত পা ধোয় সে গন্ধে। খুব জোর হাঁফ টানে বাঁচি থাকা --- মাইরে ফেলার ছাই ছাই বাতাসে। ফিরে দেখার সাহস না পায়ে খামচায় ধরে বাবলুর হাত।
“সবাই গেল? হ্যাঁ? কায়ও থাইকল না? অ্যাঁ?”
উত্তর কইরবার পারে নাই বাবলু।
গোড়ালি বালিতে পুঁইতে নখের খামচানিতে বাবলুর হাতের চামড়া তুইলে ফেলচিল জ্যোৎস্না।
“এত মানুষের অঙ্গারে হামরা বাঁচি থাইকব ত? প্যাটের টাক বাঁচি থুবার পাবেন!”
“হ! পাব!”
যেই জোরে, এমন কাঠ শুকনা বালু - তরমুজ বীজকে বুক উপচান রসের বন্ধকী দেয়; তেমন জোর এই এক বারই শোনা গেছিল বাবলুর গলায়। এই আওয়াজ ফেইলে দেওয়া যায় না! এই আওয়াজে শিকড় ছড়াইতে হয় – পাতা খুলতে হয়- ফুল ধরাইতে হয়- গুটি আনতে হয়।
আগুনে গুটান চামড়ার ঝাঁঝাঁল মরা গন্ধ; আর সে গন্ধের কলিজা উগরান বমি যারা বুকে জমায় বাঁচে, সেই বাঁইচে থাকাদের স্বস্তিতে - চর জুইরে পালানর ছাপ পড়তে থাকে। চরের ওই পাড়েই নদী। নদীর ওই পাড়েই বাঁইচে থাকা।
ওই পাড়ে আর যাওয়া নাই এখন। দুই কলা গাছের মাঝে বাঁন্ধা গরুর ভেলা নিয়া নদীর মাঝ পর্যন্ত গেলেই ভেলা প্রতি সাড়ে পাঁচশ। এমন ঈদের আগে সাড়ে সাতশ। মাঝ নদী থেকে ওই পাড়ে নেওয়ার লোক ভিন্ন। দুই কলা গাছের মাঝের ফাঁকায় টাইট করে মাথা গুঁইজে দিয়ে, দুই প্রান্তে কঞ্চি গুঁইজে ভাসায় দিলে নদীর স্রোত নিজেই কাজ করে নেয়। সারা শরীর জলের তলায় হিসাব-স্রোতে ডুবে ডুবে একটা দিক ঠিকি পায়ে যায়। নিজেই টানে। বরং মাঝ নদীতে গেলে জোর টানে ওই পাড়ে। গরুর প্যাট থেকে বার হইতে গিয়ে ফুলের অন্ধকারে আটকা পড়া বাছুরের মতন খুব হাঁসফাস লাগে – আলস্যি আসে ঝটকা লাথে স্রোতের টান ছিঁড়তে। টান ছিঁড়তে দেরী হইলে নিশান দাগা সীসার বলে ফুটিফাটা হবে মাথা। কাবাডির শেষ দম পর্যন্ত অপেক্ষা কইরে স্রোতের মাথায় লাথি মারে বাবলু। গরুর মাথা ভাসে দুই কলা গাছের মাঝে। নারকেলের রশিতে পা বাঁধা।কারণ স্রোত কাটানর চুদুরবুদানি এমনকি গরুর ঠ্যাঙেও থাকে। মুখ বাঁধা। নয়ত হল্লাইতে গিয়ে খাবি এমন কি গরুতেও খায়।
কাজের জন্য এমন কুইষ্টা রাত ত ভাল হওয়া লাগচিল!
গীতালদহ বি এস এফ পোস্ট থেকে বেশ খানিক দূরে, সিঙ্গিমারি নদীর ভিতর গরু গুতানির সময়, বাবলু বিশ্বাসের কানের লতির তল দিয়ে হুঁসহুসায় ৫.৫৬ মিমির টুকরাখান ছুটে যায়। তা আর দুই সুত উপরে গেলেই খান বাড়ির কালা ভুনার ঘর ঘামান বাস, টেক্কা বিড়ির গামছার স্বস্তি, আর মাথার ভিতর গাঁইথে থাকা তারকাটার জঙের মতন “মরি যান .........” এর গুনগুনানি - নদীর জলে গড়ায় গড়ায় সাত মাইল দূরের কোন শিমূল গাছের টঙে আঁশ হয়ে উড়ঝুর করত।
কিন্তু টুকরা খান দুই সুত নীচ দিয়ে যায়।
“এক খান গরুও ছাড়ি আসি নাই”
“বাল আমার! খুব বাঙ্গি ফাটাইচ। কত টাকার লস হইল জানিস?ওই গরুক খাওয়াবে তোর বাপে?”
“দিন দুই পরে অন্য স্পট দিয়া...।”
“থাম বাল! সময় ভাল না। একটু বইসে যাইতে হবে।”
“ক্যা? কি হইচে?”
“তুই জাইনে কি করবি! বি এস এফের খাওয়াচিলাম যারে তারাই ফাইসে গেছে। ধর্মের কাজ ত আর করি না! আমার পার্টির মানা। কিন্তু কাজ বন্ধ হইলে আমার ত চইলে যাবে। এই যে তোদের এতগুলান ছাওয়া পোয়ার অভাবী সংসার, তার কথা ভাইবাই ত...।”
কফ না ছ্যাপে খান সাহেবের গলা খানিক ভিজা আসে। চোখও কেমন চিক চিক করে নাকি!
“খুব কড়াকড়ি যাচ্ছে এখন।সি বি আই বুঝিস? বসি থাকা লাগবে কিছু দিন!”
“ঈদের বাজারে...”
“চুপ কর! শালা তোদের ধর্মের ভয় নাই রে! হিন্দুর বাচ্চা!...... হ্যাঁ জানি প্যাট কি জিনিস! দেখি। একটা উপায় আছে! কিন্তু তা প্রায়শ্চিত্তের পথ! সোজা না। সে পথ কোরবানির পথ! ঘরত যা! তোদের দিয়া হবে না। রক্তে নাই”।
এমন কালে দুশ্চিন্তাকে পা দুই পিছে ফেলা লাগে। তাতে মাথা খোলে।ঘরের মেয়েছেলে সামনে থাকলে খানিক ঠোঁট কামড়ানি আঁইষ্টা কথায় মন ভোলান যায়। এখন তা কই পায়! নাক ভর্তি নস্যি গুড়ার লাখ লাখ সুংসুং আর সেই পুরান রগড়ের আঁচে বাবলুকে সেইকে নিতে দুইলে ওঠে খান সাহেবঃ
“আর বাল তুই ত চুদুরবুদুর কমা। কেস খাইলে কি হবে জানা আছে? আমার ছোট ব্যাটার জন্মের পরে ত বাল ঝোপরা তুললি!গাঁড়ে বাম্বু ভরি বাংলাদ্যাশত পাঠি দিবে বাল!”
“কার্ড আপনেই ত বানি দিচিলেন!” এগুলা বলার সময় দুই কান পর্যন্ত বাবলুর দাঁত বার হয়। চোখের নীচে চার ভাঁজ পড়ে। ভুরু মাঝ দিয়া উপরে উইঠে যায়। এই সব কিছু মিলে হাসির মতন দেখতে কিছু একটা মুখ জুড়ে তৈরি হয়। চট করে দেখলে তাকে হাসি বলেও বোধ হতে পারে।
“আর আগের দিন আছে! ভালে হবে! ওই পাড়ত হামার অ্যাজেন্ট হবু তুই? আর হামার চাচা চাচী ত ওই পাড়তই থাকে! কি অসুবিধা! ক্যারে কি কইস!”
“গামছাৎ সাল তারিখ নেখা থাইকলে তাক কাগজ মাইনবে? নাম নেকা নাই।”
“কি কইস!”
“১৯৬৯ এ হামার বাপ এতা আসিয়া বিড়ি বাঁধা কম্পিটিসন জিতচিল। ইন্ডিয়ার এম এল এ নিজে হাতে টেক্কা বিড়ি পুরষ্কার নেকা গামছা দেয়। তয় নাম নেকা নাই গামছাৎ। সন নেকা আছে।“
হাসির দমকে চেয়ার সমেত ভারি শরীর কাঁইপে ওঠে। লুঙ্গির ভিতর দুই ফোঁটা মুত পরে যায়! আহ ফের অজু করবার নাগবে!
“ব্যাটা খান হওয়ার সময় মা মইরল! মা মরা ব্যাটা! আমি আর কয় দিন! উয়ার একটা ব্যবস্থা করি দেন কত্তা! শুনি দিনহাটাত বিল্ডিং হবার নাগচে! বাংলাদ্যাশ থাকি নোক আসি থাইকবে! এক খান ব্যবস্থা...।”
হাসির থরথরানি তখনও প্যাটের ভিতর পুরা থিতান খায় নাই খান সাহেবের!
“হুর বোকদা! ওত ছিটমহলের লোকের জন্যে। সব মুসলমান! তা ব্যাটাক মুসলমান করি দে! এক জনের জায়গা ফাঁকা আছে। নাম লিস্টে উঠিচিল কিন্তু মরি গেসে আসার আগতই। আমি একজনের নাম ঢুকি দিবার পাব! কিন্তু তাইলে ত ব্যাটাক হামার ঘর দাওয়াত খাওয়া নাগবে। আমার হাতত জল খাওয়া নাগবে। গরু খাওয়া নাগবে। আর তোক হয় ভাগি যাওয়া নাইগবে নয় মরি যাওয়া নাইগবে! পরিবারের নোক ধরা পইরলে ত বাপ ব্যাটাক বাংলাদ্যাশে পাঠাইবে! ”
নস্যি গোলা সর্দি ভত কইরে ঝাইরে ফেলার আওয়াজে বাদ বাকি হাসির দমক বার হয়ে যায় খান সাহেবের নাকের ভিতর দিয়া।
কয়দিন আধ পেটা খাওয়া আর রাত বিরাতে এক গোয়াল থেকে আরেক গোয়াল যাতায়তের অভ্যাসে আর চট করে ঘুম আসে না দামড়ার। টুল টুল চোখে দেখা যায় সামনের ঘরে এত রাতে লন্ঠন জ্বলে। হাঁটু গাইড়ে বইসে ঝিম ঝিম দোলে এক আধ বুড়া। স্বপ্নের ভিতর বুদবুদের মতন ভাইসে ওঠা চোখ –নখ- দাপট বুইনে একটা আস্ত মানুষ বানায়ে, তারে জাগনা হাতে ছুঁইয়ে দেখার চেষ্টা করে। বুনতে গিয়া মাঝের তিন দুই টুকরা ছুইটে যায় বার বার। নীচের ঠোঁটের বাঁকটা কেমন ছিল? নাভির ঠিক কোন পাশে তিল? কেমন নরম ছিল মাই? বোনা যায় না। কিছুতেই বোনা যায় না। খুব ঝাঁকুনিতে মাথা খুঁড়লে জ্যোৎস্নার মরা মুখ ভাইসে ওঠে হাতের নাগালে। ডুকরায় ওঠে বুড়া।
“খানকি মাগী! ছুঁবার দে!”
কানের সামনে ভনভন করে
“বাঁচি রাখার পাবেন?”
"আর কায় আছে হামার! কায়ও নাই।"
ট্রাঙ্কের ভিতর থেকে কি সব কাগজ, গামছা, কাপড় চোপর আউলায় ভুতের মতন থ্যাবড়ায় থাকে বাবলু। পারব............পারব। আর একটু খুঁজি দ্যাখলেই পারব।
কত জন্মের না মেলা হিসাব এক রাতেই বুইঝা ফেলার জিদে দুইলে দুইলে ঢিপের ভিতর ম্যাজিক খোঁজে সারা রাত।
শুকনা খৈল খৈল গন্ধে চোখ বুইজে ঘুমায় দামড়া। পাক ঘরের ভিতর থেকে বেড়া চোওয়া আলোয় খুব জটিল লাগে গোয়াল ঘর। সরু ফালি আলো আঁধারের সিলাই, পলকে পাশ ফিরা শোয় একে অন্যের গায়ে। মন দিয়া সেই গা এলানর নিয়ম খোঁজেন উঠানের ওপারের পাক ঘরের ভিতর শালের পিড়িতে বসা খান সাহেব। সামনে ফলের থালার কাঁধ বায়ে সরু কালো পিঁপড়ার সারি উঠে যায়। খুব চিন্তিত দুই মাতব্বর চোখ। গোয়ালের ভিতর নিকষ আঁধারে যেটুকু আলোর মতন – দামড়ার আধবোজা চোখ ছুঁইয়ে চলে যায়, সেই চোখে চোখে পড়তেই ঝলকে তরাস লাগে সারা গায়ে। ইবলিশ! আঁধার টপকান আলোর গায়ে ফাঁদের মতন ও কার চোখ! আহ আল্লা! ইবলিশ চেনা কি তার কাজ! রসুলুল্লাহ ছাড়া তাক কায় বা দেখবার পায়! করিম খান! হাই রোডের সামনের দাদার আমলের ১০ বিঘা ধানি জমিও যায় রজত ঘটকের হাত থাকি বাঁচাবার পায় না, সে চিনবে ইবলিশ! ভয় পাইতে গিয়া কেঁচোর মতন হাইসা ওঠেন খান সাহেব! হাসতে গিয়া কান গরম হয়া ওঠে। কোচ রাজার মুস্তাফির এক নাম্বার লাঠিয়ালের নাতি তায়! আলমারির নীচ তাকে রাখা রুপা বাঁধান লাঠিত এখনও হাতি গন্ডারের ছাপ মিলায় নাই। অত সহজ না হিসাব! উপায় একটা বার হবেই। কুপির আলোর লাল আঁচড় চোখ ছুঁইয়ে চইলে যায় খান সাহেবের। খুব থিতান সেই চোখ বুঁদ মতন দামড়ার চারিতে ডোবা চোখের ভিতর ঢুকে গিয়ে একটা পথ খোঁজ করে । একটা রাস্তা। জেলা পরিষদের টিকিট। ব্যবসার গিঁট। বি এস এফ সি বি আই পুলিশ ফুলিশ কি কি আছে! যা টাকায় মেটে তা ত সোজা। যা টাকায় মেটে না তার গাঁড় বাঁচাইতে কুরবানি চাই হে! একটা পথ চাই!
সীমান্তে গরু পাচারকারী সন্দেহে গণপিটুনিঃ মৃত চার
পুলিশ হেফাজতে এক
বড়সর গরু পাচার চক্রের হদিস মিলল দিনহাটা মহকুমার গীতালদহ গ্রামে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গতকাল ভোর রাতে টেম্পোতে করে আটটি গরু বাংলাদেশ সীমান্তর দিকে নিয়ে যাবার সময় স্থানীয় মানুষের কাছে হাতেনাতে ধরা পরে চার পাচারকারী। পুলিশ জানিয়েছে জনতার মারে চার জনেরই মৃত্যু হয়। পরে পুলিশের তৎপরতায় ও স্থানীয় শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষেদের মধ্যস্ততায় এলাকায় শান্তি ফেরে। গণপিটুনি মামলায় পুলিশ এক জন কে আটক করেছে।
জানলার ফাঁকা দিয়ে গলা ভোর আলো, আধ ঘুম চোখে কুঠার কোপ ঠেকে। সারা দিনের হিসাব পত্তর- দায়িত্ব-তাফাল এশার অজুতে ধুয়ে ফেলার পর থেকে সারা রাত ১৯৩৪ এর কুচবিহার রাজার আমলের ঠাকুরদার বাপের দলিলের দাগ নাম্বার মাথায় ঘোরে। ঘুমের ভিতর নাম্বার কখন মেলে। কিন্তু চটকা লাগার পর মাঝ রাতে টর্চের আলোয় সিন্দুক খুলে দলিল বার করলে ফের গুলায় যায়। সিন্দুকের আওয়াজে বিউটি বেগম গলা দিয়া অনেকটা আধকাশি মতন দলা বার কইরে পাশ ফেরে। বেগমের পাশে গিয়া শোন খান সাহেব। খুব নরম হুঁশিয়ার গলায় আধ ঘুমান বিবিরে প্রস্তাব দ্যা
“হামার দাদার আমলে বাড়িত গরু চুমানি হইত! শিঙত ত্যাল মাখায়া, ছান করায়া, আটিয়া কলা আর মিষ্টি কুমড়া খাওয়ান হইত গোয়েলের গরুক। গোয়ালে ধূপ দিত দাদি। আবার চালু করা যায় না! হামরা হইলাম নষ্ট শ্যাখ বুঝলা! গরু চুমানি ত হামার নিয়মে আছেই!”
খান সাহেবের দাদার দাদার দাদা নষ্ট থেকে শেখে যাওয়ার যে রাস্তা নিছিলেন তার উল্টা পথ আজ একটু বেশী ভরসার লাগে খান সাহেবের। তার উপর জেলা পরিষদের টিকিট , পার্টি ফান্ডের টাকা-সারা রাত ধরে টোপা লাগা ডর ডর ভাব। এইসব একটু আউলানর চেষ্টায় চোখ বুজতে গেলেই দরজার শব্দে খেঁকুড়ে ওঠে গলা!
“কে রে শালার ব্যাটা শালা, দরজা ভাঙ্গি ফেলাবু নাকি?”
“এইটা কি হয়া গেল! আপনি থাকতে!”
“কি হইল?”
“শামসুদ্দিন আর......”
“তুই বাঁচি আছিস ত? তোর ঘরত পুলিশ ঢোকেনাই ত? শালা হিন্দু হয়া ভয় চুদাইস ? তোক মাইরা পুণ্য হয় না এই দ্যাশে! আর এই নাইনে যে রিক্স তা না জানিয়া আইচ্চিলু?”
“আপনের ভরসাত...”
“থো বাল। কাজ করিস পাইসা পাইস! ভরসা কিসের? না পোষায় করবু না! অনেক কাম আছে! করি খা! তোরা বুঝিস না রে! এই যে কোলকাতা দিল্লী থাকি নোক জন আসে। আমাক ত জবাব দেওয়া নাগে না কি? জেলার সেকেটারি সান্ন্যাল বাবু ত মুখের উপর কয়া দিল, ‘খান পার্টির বারণ আছে! কিছু ত একটা দেওয়া নাইগবে!’ আমাদের আর কত লস? উয়ার লসটা হিসাব কচ্চিস? পুরা জেলার কমিশন বন্ধ এই ঈদের বাজারে! “
মাথায় গোজা পেরেকের জংয়ের মতন বিরবিরানি নিয়ে রাতভোর পিছলায় চলা বাবলুর চোখের ভিতরের কেতোর মতন তরাসে খুব আঠালো রকম ভিক্ষা জমা হয়। খুব এলোমেল সেই চোখ। বড় হু হু মতন শূন্য। সেই চোখের দিকে খানিক তাকাইলে খুব নেশা নেশা করুণায় হাই ফাই করে বুক। যাই হোক বাবলু তার প্রজা! তার জমিত হাল দেয় সে! গলা খাঁকারি দেয় খান সাহেবঃ
“শোন তোক কই, পাঁচ কান করিস না! সামনের তিনটা কামের ভিতর একটাত বিপদ আছে! কোনটা কবার পাব না! এই তিন টাত যাইস না!”
ভোরের কত আগে, রাতের কত পর থেকে উঠানের কোনায় হিম দাঁড়ায় আছে লুঙ্গি পড়া আধ বুড়া, গোয়ালের দামড়াও তা থা পায় নাই। এত কুইষ্টা ভোর রাতে, পূব আকাশে শুকতারার সাদা দাপটে জ্বল জ্বলায় ওঠে চোখ। জ্বলুনি বাড়লে, চোখ বায়া নামা ঠান্ডা জল, ঠোঁটের ভিতর দিয়ে টুপায় - জিভ জুড়ান নোনতা স্বাদে পিঠ ছড়ায় বসে। বাসি মুখে খুব তুষ্টি দেয় সেই স্বাদ। একটা মিলা যাওয়া হিসাবের স্বস্তি ঘর বায়ে উঠান ভরায় দিয়ে পায়ের পাতার তলায় আইসে হোঁচট খায়। বুকের ভিতর হামান দিস্তার ঠাপানিতে তিরতির ঢেউ ছড়ায় পড়ে সেই স্বস্তির টলমল জলে। সেই হামান দিস্তার আওয়াজ নিজের কানেই গুমগুমাইলে আবার কাঁপ ধরে শরীরে। বিড়বিড় করে বাবলু বিশ্বাস
“কিরে মাগী কতা দিচিলাম কিনা! কোন মরদের বাচ্চা এইবার কি করে দেখি!”
বলতে বলতে মোতা পায়। মুততে গেলে একফোঁটা মুতও ঝরে না। কুচকান বাঁড়া জুইড়ে কনকনা ব্যথা বোধ হয়।
“এক বার মরি গেলে আর কষ্ট নাই”
ঘুইরা ঘুইরা দেখে ঘর উঠান আনাচ কোনাচ। দামড়ার গলায় হাত বুলায়। কালা নুনিয়ার পোলাও খাওয়ার তোরজোড় আগের রাতেই করা আছে। আধ ঘন্টার আঁচে গোয়াল পর্যন্ত পৌঁছায় গন্ধ। কালা নুনিয়ার গন্ধ কেমন মাংস পচা গন্ধের নাকান ঠেকে নাকে। নিজের হাত পায়ে মাখামাখি হয় গন্ধ। গলা শুকায় আসে।
“ওঠ বাপ! হামি কামত যাম আজ! আগত বাপ ব্যাটায় পোলাও খায়া নেই!”
"এই রাইতত কায় খাইবে? আপনে খান।"
"আজ মেইন রোড পর্যন্ত যাবু বাপ হামার সাথত?"
“ফিরতে দেরী হইলে খান সাহেবের বাড়ি যাবা! কবা আপনি বাবাক কতা দিচিলেন। তায় বুইঝবে!”
ভোর রাতের ফিনফিন হাওয়া ভারি হয়ে আসে খান সাহেবের বাড়ির কালা ভুনার গন্ধে! কুরবানির সাঁতলান গোস্ত- রসুন বাটা- গরম মশলা- জিরা- ধনিয়া-গোলমরিচ - উনানের ধোঁয়া- বিউটি বেগমের আধ চাবান পানের কষ- ছোট ছোট ঢেউয়ের মতন সাঁতরে আসে দোলার জমি পর্যন্ত। দোলার জমি টুকু পাড় হলেই হাই রোড। হাই রোডে ওঠার আগেই সেই ঢেউয়ে খাবি খায় বাবলুর ব্যাটা। জিভ ভিজা আসে- পেটের ভিতর গজায় ওঠা তিন চার জোড়া হাত অন্ধের মতন আঁচড়া আঁচড়িতে কি জ্যান খোঁজে। মাংসের গন্ধে নাক জিভ গলা টগবগ চাগায় উঠলে খুব পাপ বোধ হয়। গলায় ঝোলা লোকনাথের লকেটে মাঝের আঙ্গুল বুলায়। ছ্যাপে ভেজা জিভে বার তিনেক বুরবুরি কাটে মাষাণ বাবা।
“খান চাচারা কি গরু কুরবানি দেয় না খাসী?”
চারদিন ধরে গোয়ালে রাখা মুখ বাঁধা দামড়ার গলার দড়ি ধরে হাঁটা বাবলু উত্তর করে না।
দোলাটা পার হইলেই মেইন রোড ! মেইন রোডের ওইপাড়ে …।
মেইন রোডের ওই পাড়েই দাঁড়ায় থাকা টেম্পো তে যে তিন চার মানুষের ভনভনানি , আগে থেকে না জানলে তা ব্যাঙ - ঝিঁঝিঁর ডাকের থেকে আলাদা করার উপায় নাই। দূর থেকে আধা অন্ধকারে আধা আওয়াজে - একে একে সব কয়টা চেনা মুখ খুব চেনা হয়ে ঠেকে বাবলুর। বাচচু হালদার – ওর মাগীর দোষ আছে। কাল্টু মিঞা- বাঁ চোখে ছানি কাটাইল দুই মাস আগে। ধরণী বর্মণ- শুঁটকি দিয়া তিন থাল ভাত মারি দিবার পারে। আর পাঁচটা দিনের থেকে হাত দুই উঁচা লাগে প্রত্যেকের দ্যাহ! ওদের গায়ের সব কটা লোম, পিঠের পাঁচরা, পায়ের হাজা, পোঁদের গন্ধ , বাসি মুখের ঢেকুর বড় আপন লাগে! নিজে নিশ্বাস ছাড়তে গিয়া তাদের হয়ে বাতাস ছাড়ি ফেলে বাবলু! মুখ বুক পিঠ কাঁধ পাছা হাত পা সব কি চোখ জুড়ান বাঁকে তালে নড়ে চড়ে টেম্পোর ঠিক উপরের জমাট আধ অন্ধকারে! ওহ! শেষ হওয়ার আগে এত সুন্দর হয়া ওঠে মানুষ!
নিজের হাতের দিকে তাকায় বাবলু! কিছু দেখা যায় না!
শুধু অন্ধকার কাঁপে!
ব্যাটার চোখের দিকে তাকায় বাবলু!
চোখের পুটুলির জাল খাঁজের বাদাম রঙে থকথক জমা সিঙ্গিমারির কাদা। সেই কাদা জুড়ে যতদূর চোখ যায়, থ্যাবড়া মতন পালানর দাগ বড় থেকে ছোট হতে হতে আকাশে মিলায়। ওই দাগ জুড়ে অবিকল নিজের আঙ্গুলের ছাপ। সেই ছাপে জোঁকের মতন তেষ্টা নিয়া আধমরা শুয়ে থাকে বাবলু।
আয়না চমকে ছিটকায় ওঠে শরীর!
খানিক সময় নেয়।
দরদর কইরে ঘাইমে ওঠে সারা শরীর। পেটের মোচরে হাগা মাইখে যায় লুঙ্গিতে। থ্যাপ বসে হাঁটু গাইড়ে ব্যাটার পায়ে। শুকনা গলা জিভে গোঁ গোঁ মত কি যে বার হয় তা রাস্তার বুড়া বটখানও তার এক জীবনে শোনে নাই। ব্যাটার ব্যস্ত হাত কাঁধে নাইমে আসার আগেই হুহু শব্দ পায় সব আওয়াজঃ
“হামার যে খুব ভয় নাগে বাপ! হামার যে খুব ভয়!হামাক তুই বাঁইচবার দিবু?”
“আরে কি কন? শরীর খারাপ? ঘরত গিয়া শোন তো! আগতই কইলাম আইজ হামি যাই। ঘরত যান! আমি ঘুইরা আসি”
গরুর রশি নিয়া আগায় ব্যাটা। মুখ থুবরায় পইড়ে থাকে বাবলু।পিছের আকাশের তলায় লাল জইমা ওঠে। সেই লাল খুইটে খাইতে খুব উচুতে ঠোঁট ভাসায় চিল। ঘাড়ের পিছনে দুই টা জ্বল জ্বল চোখ বোবার মতন খামচায় ধরে বাবলুর শ্বাস নালী, তার দুই পাশের দুই শিরা। কত বছর আগে মাটি হওয়া গোরের ভিতর থেকে শোনা যায় বাঁইচা থাকাদের সুরঃ
“আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন্নি কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইব্রাহিম আলাহিসলাম !”
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
লালমণির হাট সদর থানা,
লালমণির হাট
বিষয়ঃ এজাহার
জনাব,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি এস আই/ ইসমাইল সিদ্দিকী , লালমণির হাট সদর থানা, লালমণির হাট, এই মর্মে এজহার করছি যে, আমি অদ্য ইং ২৩/০১/২০০২ খ্রিঃ রাত ১.২০ মিনিটে মোগলহাট মান্নান চৌপথি অঞ্চলে মোবাইল-২ ডিউটি করবার সময় বেতার যন্ত্রে সংবাদ পাই যে মাঠেরপাড় চত্বরে কিছু দুষ্কৃতিকারী একাধিক বাড়িতে অগ্নি সংযোগ ঘটিয়েছে। এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। উক্ত স্থানে হাজির হলে দেখি কিছু অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ১) দুর্গাচরণ বিশ্বাস পিতা মদন বিশ্বাস , এবং ২) রহমত মিঞা পিতা কাচু মিঞা এর বাড়িতে অগ্নি সংযোগ করে রাতের অন্ধকারে পলায়ন করেছে। ঘটনায় দুর্গাচরণ বিশ্বাস এবং সাবিনা বিবি স্বামী রহমত মিঞা গুরুতর ভাবে দগ্ধ হন এবং স্থানীর চিকিৎসা কেন্দ্রে তাদের মৃত ঘোষণা করা হয়। দুজনের দেহ পোস্টমর্টেমের জন্য আটক করা হয়েছে। তদন্তে জানা যায় ইং ২৩/০১/২০০২ খ্রিঃ রাত সাড়ে ১২ টার দিকে জ্যোৎস্না বিশ্বাস পিতা দুর্গাচরণ বিশ্বাস এবং বাবলু মিঞা পিতা রহমত মিঞা এক সাথে নিখোঁজ হন। এলাকার বাসিন্দা মোঃ কালাম পিতা- মোঃ খালেক তাদের সিঙ্গিমারির চড়ে ইন্ডিয়া বর্ডারের দিকে যেতে দেখেন বলে দাবী করেন।আরো দাবী এই যেঃ জ্যোৎস্না বিশ্বাস আর বাবলু মিঞা বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের পরিকল্পনায় ছিলেন এবং আজ দুপুরে জ্যোৎস্না বিশ্বাস কে ইসলাম গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হলে, তিনি তা নাকচ করেন এবং আল্লাহ রসুল সম্পর্কে অবমাননাকর কথা বলেন। বাবলু মিঞা তাতে সঙ্গত দেন। এই ঘটনায় সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরী হয়।
অতএব উক্ত ঘটনায় অগ্নি সংযোগ এবং খুনের অভিযোগে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পেনাল কোড ৩০২ ধারায় মামলা রজু করার নিমিত্তে মঞ্জুরি গ্রহণ করতে মর্জি হয়। জ্যোৎস্না বিশ্বাস এবং বাবলু মিঞার বিরুদ্ধে পেনাল কোড ২৯৫ A এবং ২৯৮ ধারায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করবার মর্মে মামলা রজু করতে মর্জি হয়।
দাখিলকারী
ইসমাইল সিদ্দিকী, এস আই
লালমণির হাট সদর থানা
লালমণির হাট।
চোখ বাঁন্ধা গামছার ফাঁক ফোকরে তাও পিছলায় আসে কিছু আলো। আজ রাত অত না। জলের তলার ভেজা গিঁট আজ খানিক আনাড়ি। খানিক নরম। সামনের ডান পায়ে দুই খুরের মাঝে গুঁজে যাওয়া রশিতে পা মুড়ায় হালকা চাড় মারলেই পা থেকে আলগা হয়ে আসে খুর। আলগা হয় রশি। নুন নুন রক্ত মেশে জলের তলে। বহু কালের জমান হাঁফ এক ফোঁতে খালাস পায় ভোর বাতাসে। সারা শরীর জুড়ে সাঁতার পায় দামড়ার। খলবল পা চালায় স্রোতের মাথায়।
ভাঙ্গে না স্রোত!
স্রোতের মাথায় ভাসি চলে কলার ভেলা। তাতে গোঁজা দামড়া। তাকে গুতান মানুষ।
নদীর তলে নুন নুন গন্ধ ভাসতে ভাসতে খোঁজে কোন উপাসি ঘড়িয়ালের আধ মারা নাক।
তবু শরীর জুড়ে সাঁতার পায় দামড়ার।
আনন্দ হয়! বড় আনন্দ হয়!
Comments
Post a Comment